শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি / ইতিহাস

ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক গৈলা সংস্কৃতি ও বিদ্যাচর্চার এক মূর্ত প্রতীক। শিক্ষা বিস্তারের স্বপ্নে বাবু কৈলাশ চন্দ্র সেন ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট পদে আসীন হওয়া সত্বেও গৈলার আপামর জনগণে কথা চিন্তা করে চাকুরী থেকে অব্যহতি নিয়ে বিদ্যাদানে ব্রতী হন, যার প্রাতিষ্ঠানিক  রূপদান এই গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৮৯৩ খ্রি: প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয় তৎকালীন সময় থেকে সর্ব সাধারণের মাঝে শিক্ষার আলো বিচ্ছুরণের কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।তারই ফলশ্রুতিতে এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীগণ দেশ বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে এর সুনাম বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন। অত্র এলাকার কৃতি সন্তান কৃষক কূলের নয়নমনি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারী পদ অলংকৃত করে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি সাধন করেন।

সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলাতে এটি অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে ১৮৯৩ সালে গৈলা হাই ইংলিশ স্কুল নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি মডেল হাইস্কুলে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এখানে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীতে পাঠদান করানো হয়।

১৮৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি আগৈলঝাড়ার ফুলশ্রী গ্রামের শিক্ষানুরাগী কৈলাশ চন্দ্র সেন নিজ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে বিএ সম্পন্ন করে সরকারি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজ অঞ্চলের শিক্ষার গুরুত্বের কথা ভেবে উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও দীর্ঘ ৩৭ বছর বিদ্যালয় পরিচালনার পরে অবসর নেন।
তিনি প্রথমে গৈলা কালুপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দাসের বাড়িতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৩৬০ জন। বর্তমানে গৌরনদী-গোপালগঞ্জ সড়কের পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়ায় গৈলা নামক স্থানে বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়টি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া অঞ্চলের সর্বপ্রথম মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল। বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে হিজলী বন্দিশিবিরে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে নিহত তারক সেনের স্মৃতিসৌধ ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে সর্বপ্রথম সম্মুখযুদ্ধে নিহত শহীদ সিপাহী আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্সের সমাধি।

১৯৯৩ সালে গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজেদের অর্থায়নে ১৬০০ বর্গফুট আয়তনের ‘শতবর্ষ ভবন’ গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বিদ্যালয়টি মডেল হাইস্কুলে রূপান্তরিত হয় ও গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালে বিদ্যালয়টি ১২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।

বিদ্যালয়টিতে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। তাদের পাঠদানের জন্য মোট ৩৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেনঃ
শেখ মুজিবর রহমান
আবদুর রব সেরনিয়াবাত,
(বাংলার সাবেক কৃষি মন্ত্রী)
সুনীল কুমার গুপ্ত, (সাবেক মন্ত্রী)
ব্রিগেডিয়ার এম এ মালেক, (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী)
আবুল হোসেন, (সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী)
অজয় দাস গুপ্ত, (দৈনিক সমকাল এর সহযোগী সম্পাদক)
তটিনী গুপ্তা, (কলকাতা বেথুন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ)
অমিয় দাশ গুপ্ত, (প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ)
সুরেন্দ্র নাথ গুপ্ত, (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’বার পিএইচডি ডিগ্রী প্রাপ্ত)